
প্রকৃত অর্থে ঈমানদার হতে হলে, সর্বপ্রথমে আমাদের, বুঝতে হবে ঈমান কি এবং কার প্রতি কিভাবে ঈমান আনলে ঈমানের দাবিতে সত্তিকার ঈমানদার হওয়া যায় এমর্মে মহাগ্রন্থ আলকুরআনের বানী ও রাসুল (সাঃ) এর অসংখ্য হাদীস থেকে প্রসিদ্ধ একটি হাদীস বর্ননার পূর্বে, ঈমান সম্পর্কৃত সংক্ষিপ্ত কিছু কথা স্বরন করে দিচ্ছি। ঈমান" আরবী শব্দ, অভিধানিক অর্থে ঈমান" শব্দের অর্থ হচ্ছে- বিশ্বাস স্থাপন করা। প্রকৃত অর্থে ঈমান হচ্ছে- সঠিক জ্ঞানের ভিত্তিতে অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস।
ঈমানের আসল অর্থ হলো কারো উপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করা এবং সে কারণে তার কথাকে সত্য বলে মান্য করা। মানুষ তখনই কারো কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করে। যখন তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে অটল- বিশ্বাস রাখে। বিশ্বাস ও আস্থাই হলো ঈমানের মুল কথা। ইসলামী শরীয়া'র, পরিভাষায় হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর নিকট হতে যে কিতাব (অহীর সমুষ্টি) প্রাপ্ত হন তাতে এবং তিনি যে পথ (তাঁর সুন্নাহ) প্রদর্শন করেছেন তাতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই ঈমান। সাধারন অর্থে: যে কোন বস্তুকে তার আসল রুপ চিনে বস্তু হিসেবে স্বীকার করাটাও বস্তুর প্রতি ঈমান বলে। এবার আমরা ঈমান সম্পর্কৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের প্রাথমিক কিছু অংশ পর্যালোচনা করবো। যে হাদীসটি বোখারি ও মুসলিম গ্রন্থে কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে হাদীসে জিব্রাইল নামে খ্যাত আছে। উক্ত হাদীসে উমর (রাঃ) এর বর্ননার মাধ্যমে ঈমান সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে যা জানিয়েছেন-একদিন আগন্তুক এক ব্যাক্তি (যিনি প্রকৃতপক্ষে জিবরাইল (আ) ছিলেন এবং মানুষের রূপ ধারণ করে রাসূল (সা) এর কাছে এসেছিলেন। ) রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলো, ঈমান কি বলুন। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ তায়ালাকে ও আখিরাতকে সত্য জানবে ও সত্য বলে বিশ্বাস করবে, আর এটাও বিশ্বাস করবে যে, পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটবে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটে, চাই তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। এটাই ঈমান। (মুসলিম) উপরোক্ত হাদীসের পর্যালোচনায় মূল যে বিষয়টি প্রতিয়মান হচ্ছে সেটা হল, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং পরকাল বিশ্বাস সেই সাথে তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস অানয়ন। উপরোক্ত বিষয় গুলুর প্রতি তখনী ঈমান প্রমানিত হবে যখন কেহ নির্ভূল জ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৃত পরিচয়ে উক্ত বিষয়ে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে।
আল্লাহর প্রতি ঈমান কি? আল্লাহ হচ্ছে সার্বোভৌম সত্বার সত্বাগত নাম, যার পরিচয় তিনি নিজেই দিয়েছেন, রব্ব দিয়ে। রব্ব হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম প্রধান গুনবাচক নাম যার প্রকৃত অর্থ হল সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক। সুতরাং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব (সার্বভৌম মালিক) হিসেবে জেনে, বুঝে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিত মেনে নেওয়াই মুলত আল্লাহর প্রতি ঈমান।
অতএব ঈমানদার হতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনে নিয়ে (রাব্বুনাল্লাহ) ঘোষণার মাধ্যমে ঈমানদার হতে হবে। আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনে সেই রব্বের প্রতি ঈমান আনার বিষয়ে মহাগ্রন্থ আলকুরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা – আল ইমরানের ১৯৩ নং অায়াতের মাধ্যম আল্লাহ রাব্বুল অালামীন যে বিষয়টি জানিয়েছেন-
হে আমাদের রব্ব আমরা একজন আহব্বানকারীর অাহব্বান শুনে ছিলাম যিনি অামাদেরকে ঈমান আনার (ঈমানদার হওয়ার) জন্য দাওয়াত দিয়েছেল। তিনি বলেছিলেন (হে মানব সকল) তুমরা তোমাদের রব্বের প্রতি ঈমান অানো। অতপর অামরা আমাদের রব্ব অাল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি।
উপরোক্ত আয়াতাংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখায়:
আল্লাহ, বিশ্বমানব জাতিকে জানিয়ে দিচ্ছেন, আহব্বান কারী হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাঃ, এবং আহব্বান গ্রহনকারী'রা হচ্ছেন, সাহাবায়ে কেরামগন। সুতরাং ঈমান আনতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনেই আল্লাহর প্রতি ঈমান অানতে হবে। অর্থাৎ: সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে, একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, আইন-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা মেনে "রাব্বুনাল্লাহ" ঘোষণা করতে হবে। অতপর সেই রব্ব অাল্লাহর অাইন-বিধান মেনে চলার সিদ্ধান্ত করে, "আশহাদু- আল্লাহ ইলা-হা ইল্লাল্লাহ" অঙ্গীকার করতে হবে। এবং এর বাস্তবায়নে জীবনের সকল ক্ষেত্রে শর্তহীন আনুগত্য অনুসরন- অনুকরণ একমাত্র আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর করার অঙ্গীকার করতে হবে "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ" তবেই একজন ব্যাক্তি প্রকৃত অর্থে ঈমানদার হিসেবে স্বীকৃত হবে।